ট্রমা কাউন্সেলিং
মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অঘটনের জন্যে মানুষ ট্রমা বা মানসিক আঘাতের সম্মুখীন হন। মানসিক বা শারীরিকভাবে ক্ষতিকর বা ভীতিকর বিভিন্ন পরিস্থিতি বা ঘটনার কারণে ট্রমা হতে পারে, যা একজন ব্যক্তির সামাজিক, মানসিক, এবং শারীরিক স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক সুস্থতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। উপরন্তু, সমাজের বিভিন্ন আচার আচরণ, কুসংস্কার ও প্রচলিত রীতি বা অভ্যাসগুলিও মানসিক আঘাত কে প্রভাবিত করতে পারে। বেদনাদায়ক (ট্রমাটিক) কোনো ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার ফলে কেউ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলে সে এই অবস্থার শিকারে পরিণত হতে পারে এবং দীর্ঘকাল ধরে এই সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার ফলে সেটা পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি) তে পরিণত হতে পারে।
একটি আঘাতমূলক ঘটনার পরের ঘটনা প্রায়শই স্মৃতিশক্তি এবং ফোকাসের ব্যাঘাত হিসাবে প্রকাশ পায়, যার ফলে ব্যক্তি উদ্বেগজনক চিন্তাভাবনা এবং বিভ্রান্তির অনুভূতি দ্বারা গ্রাস হয়। ঘটনার পুনরাবৃত্ত স্মৃতি আরও সংবেদনশীল যন্ত্রণা অনুভব করে।
আঘাতমূলক ঘটনায় যে শারীরিক আচরণগত প্রতিক্রিয়া যুক্ত থাকে তা হল,
ক্ষনে ক্ষনে জানা অজানা কারণে দুঃখ পাওয়া
ঘুমের সময়সূচী এলোমেলো হয়ে যওয়া
প্রায়ই মাথা ঘোরা,
বমি বমি ভাব
তীব্র মাথাব্যথা
অস্বস্তি বোধ করা বা ক্রমাগত ঘেমে যাওয়া
খাওয়াদাওয়ার প্রতি অরুচি
দরকার ছাড়া হৃদস্পন্দনে বৃদ্ধি
ঘুমের সমস্যা
ধূমপান, মদ্যপান বা ক্যাফিনের প্রতি ঝোঁক
বার বার একই চিন্তা হওয়া তার থেকে লজ্জা বা ভয় অনুভব করা
নিজের মধ্যে বা আপনার চেনা পরিচিত কারোর মধ্যে উপরে উল্লেখিত ট্রমা-সম্পর্কিত এক বা একাধিক লক্ষণগুলি হতে দেখলে, শীঘ্রই বিশেষজ্ঞ থেরাপিস্টের সাহায্য নিন।
আমাদের সংস্থার বিশেষজ্ঞ ট্রমা থেরাপিস্টরা ব্যক্তিদের বিভিন্ন ধরণের কৌশল ও পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেন যাতে আপনি ট্রমার প্রভাবগুলি মোকাবেলা করতে এবং কাটিয়ে উঠতে পারেন। একজন ট্রমা থেরাপিস্টের কাছ থেকে ব্যক্তিরা যা যা শিখতে পারেন তার মধ্যে রয়েছে:
1. মোকাবিলা করার কৌশল: আপনার থেরাপিস্ট আপনার অতিরিক্ত ভয় বা আবেগ , চাপ এবং উদ্বেগ পরিচালনা করার জন্য আপনাকে বিভিন্ন এক্সারসাইজের পদ্ধতি শেখাবেন যেমন, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, গ্রাউন্ডিং টেকনিক এবং মননশীলতা অনুশীলন।
2. আবেগ নিয়ন্ত্রণ: ট্রমা থেকে জন্ম নেওয়া আবেগগুলি সনাক্ত এবং নিয়ন্ত্রণ করতে শেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। থেরাপিস্ট ব্যক্তিদের তাদের অনুভূতি প্রকাশ এবং প্রক্রিয়াকরণের স্বাস্থ্যকর উপায় বিকাশ করতে সহায়তা করেন।
3. আচরণগত প্রযুক্তি: থেরাপিস্টরা ক্লায়েন্টদের নেতিবাচক আচরণগত ধরণগুলি সনাক্ত করতে এবং সংশোধন করতে সহায়তা করে যা মানষিক আঘাতের ফলে দেখা দেওয়ার সম্ভবনা রাখে যেমন স্ব-ধ্বংসাত্মক আচরণ ।
4. সহজ ভাবে কথোপকথনের ধরণ: আবেগ, চাহিদা এবং সীমানা প্রকাশের জন্য কার্যকর কথোপকথন অত্যাবশ্যক। থেরাপিস্টরা আপনার মধ্যে আপনার আসে পাশের লোকজনদের সাথে কথা বলতে পারার দক্ষতা উন্নত করতে, স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক এবং সংযোগগুলিকে উৎসাহিত করতে আপনাকে সাহায্য করেন ।
5. গ্রাউন্ডিং টেকনিক : বিচ্ছিন্নতা পরিচালনা করতে এবং বর্তমান মুহুর্তের সাথে সংযুক্ত থাকতে, থেরাপিস্টরা গ্রাউন্ডিং টেকনিক শেখান। এই কৌশলগুলি ব্যক্তিদের দুর্দশার মুহুর্তগুলিতে বাস্তবের সাথে সংযোগ রাখতে সহায়তা করে।
6. নিজের যত্ন নেওয়া : থেরাপিস্টরা নিরাময় প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে স্ব-যত্নের গুরুত্বের উপর প্রতিনিয়ত জোর দিয়েছেন । এর মধ্যে রয়েছে রুটিন তৈরি করা, পারস্পরিক সীমানা নির্ধারণ করা এবং মন ভালো রাখে এমন কিছু শখ বা হ্যাবিট রাখা ।
7. ট্রমা ন্যারেটিভ: একজন থেরাপিস্টের নির্দেশনায় আপনার ট্রমার একটি ধারাবাহিক বর্ণনা তৈরি করা যা আপনাকে আপনার অভিজ্ঞতা অন্যদেরকে বোঝাতে সাহায্য করতে পারে।
8. নিরাপত্তার পরিকল্পনা: ট্রমার সাথে রোজ মোকাবেলা করছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য, নিরাপত্তার পরিকল্পনা তৈরি করা অপরিহার্য। থেরাপিস্টরা ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করে তাদের ট্রিগারগুলি কে শনাক্ত করতে, নিরাপত্তা কৌশল তৈরি করতে এবং নিরাপত্তার অনুভূতি তৈরি করতে সাহায্য করেন।

